কুমারঘাট।।সন্ত্রাসবাদ হলো মানবতার শত্রু। আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করা। অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বার্তা দিয়েছেন। এই অপারেশনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের ১টি খাঁটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টেরর ও ট্রেড একসাথে চলতে পারে না। সন্ত্রাসবাদকে কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করা যাবে না। তারই জানান দেওয়া হয়েছে। কুমারঘাটের গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়ামে আজ ১৫টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা। গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়াম থেকে ভার্চুয়ালি প্রায় ২৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ের ৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও ১০টি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তনা চাকমা, বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব ড. কে শশীকুমার, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক ড. তমাল মজুমদার ও ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার সুদাম্বিকা আর। এই অনুষ্ঠানে শিলান্যাস করা হয়েছে কুমারঘাট মহকুমা শাসকের নতুন ভবন, বেতছড়া দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন, পি.এম, জনমনের অন্তর্গত সাধুচন্দ্রপাড়া ও সেবাচন্দ্রপাড়ায় দুটি মাল্টিপারপাস সেন্টার ও পেঁচারখলে অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্রের।

এছাড়া উদ্বোধন করা হয়েছে পেঁচারখলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন, শান্তিপুর হাইস্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, কুমারঘাট মহকুমার সোনাইছড়ি, সায়দাবাড়ি, বেতছড়া ও দেওভ্যালিতে ৪টি নতুন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাকা বাড়ি, রতিয়াবাড়িতে নতুন আর.সি.সি ফুট ব্রিজ, মাকুছড়া তহশিল কাছাড়ির নতুন ভবন, উত্তর পূর্ব কাঞ্চনবাড়ি হাইস্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ ও দুধপুর স্কুলের সায়েন্স ল্যাব ও আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটের কক্ষ। প্রকল্পগুলির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। এর মাধ্যমে বিকশিত ত্রিপুরা গড়ার দিকে একধাপ এগিয়ে গেলো কুমারঘাট মহকুমা। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সহ অতিথিগণ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়ামের প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন।

উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গাছ আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। পরিবেশকে যাতে সুন্দর ও নির্মল রাখা যায় সে ব্যবস্থা করছে সরকার। তিনি বলেন, গত বছর বন দপ্তরের উদ্যোগে সারা রাজ্যে পাঁচ মিনিটে ৫ লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছিল। তিনি বলেন, গাছপালা না থাকলে অক্সিজেন আসবে কিভাবে? তেমনি মানুষের জন্য মানুষ, এই বোধ থেকে একে অপরকে রক্তদান করেন।মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, সমাজের অন্তিম শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার জনমুখী বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলির সুবিধা কিভাবে পেতে পারেন সে সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে দুটি পর্যায়ে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান রাজ্যজুড়ে করা হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে। আমার সরকার পোর্টালের মাধ্যমে কোথাও জনগণের কোনও অভিযোগ থাকলে দ্রুততার সাথে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। যেখানে যে বিষয় প্রয়োজন সেখানেই উন্নয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এতোগুলি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন শুধু জনগণকে খুশি করার জন্যই নয়। এই কাজগুলি করতে সরকার দায়বদ্ধ এবং এর থেকে সুবিধা পাওয়া জনগণের অধিকার।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন সর্বত্র উন্নয়নের কাজে নজির রাখছে। পঞ্চায়েতস্তরে উন্নয়নের জন্য কিছুদিন আগে জাতীয়ন্তরে ৭টি পুরস্কার অর্জন করেছে। গোমতী ও ধলাই জেলা খুব সম্প্রতি উন্নয়নের জন্য দেশে সম্মানিত হয়েছে। তার পরেও যেসব কাজে কিছু ঘাটতি রয়েছে সেখানে নজরদারি রাখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যে রেল পরিষেবায় কুমারঘাট, ধর্মনগর ও উদয়পুর রেল স্টেশন অমৃত ভারত প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই ত্রিপুরায় উন্নয়ন হচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে মাথাপিছু আয়ে ত্রিপুরা এখন আসামের পর দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। কৈলাসহরের বিমানঘাঁটি পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, ঊনকোটিতে নদীর বাঁধ ভাঙ্গনের মতো কিছু সমস্যা রয়েছে। এর সমাধানের জন্যও কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত রাজ্যে ৫৭৮ কোটি টাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন হয়েছে। মানুষকে স্বনির্ভর করতে বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন রাজ্যে স্বসহায়ক দল রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার। সরকার এই স্বসহায়ক দলগুলিকে এখন পর্যন্ত ৭০০ কোটি টাকা রিভলভিং ফান্ড দিয়েছে। মানুষের স্বার্থে এই উন্নয়নের কাজ আগামীদিনেও চলবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ১৯ হাজারের উপর সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আউটসোর্সিং-এ আরও ৫ হাজারের বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একদিকে সরকারি চাকরি অন্যদিকে মানুষকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে সরকার কাজ করছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, আজ কুমারঘাট মহকুমার জনগণের জন্য একটি আনন্দের দিন। এতগুলি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের ফলে মহকুমার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবেন। পানীয়জল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলাশাসক ড. তমাল মজুমদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অর্ঘ্য সাহা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *