আগরতলা।অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি। কৃষকরা হলেন আমাদের অন্নদাতা। আমাদের রাজ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়াস নিয়েছে।
আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে আমাদের রাজ্যকে খাদ্যে স্বয়ংন্তর করতে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে গত ১৯ থেকে ২২ আগস্ট (২০২৪) পর্যন্ত রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। এনডিআরএফ প্রকল্পে ডিবিটি’র মাধ্যমে আজ রাজ্যের ৪৫টি কৃষি মহকুমার ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৪৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ৭৯ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। রাজ্যে বর্তমানে মোট ৪৯৮টি কৃষি মহকুমা রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অবশিষ্ট অম্পি, করবুক ও অমরপুর এই তিন কৃষি মহকুমার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, রাজ্যে বার্ষিক ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন হয় ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। খাদ্যশস্যের ঘাটতি পূরণে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ জেলা, গোমতী জেলা ও সিপাহীজলা জেলা খাদ্যে স্বয়ম্ভর হয়েছে। খোয়াই ও ধলাই জেলা স্বয়ম্ভরতার পথে এগিয়ে চলেছে। অবশিষ্ট জেলাগুলিতেও স্বয়ম্ভরতার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকদের আয় দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সমাজে কৃষকদের আত্মসন্মান ও মর্যাদা বেড়েছে। যা আগে দেখা যায়নি। কৃষকরা ছিলেন অবহেলিত। রাজ্য সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রয়াস নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা কৃষকদের উন্নয়নে আন্তরিক রয়েছেন। আজ রাজ্যের অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী কৃষিকাজে এগিয়ে আসছেন। কৃষক সমাজের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১৯ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় এত বড় ক্ষতি রাজ্যে আর কোনদিন হয়নি। ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এত টাকা ক্ষতিপুরণও পান নি। তিনি বলেন, কৃষকরা হলেন ভগবান। আমাদের রাজ্যের ৫৮টি ব্লকের মধ্যে ৩০টি ব্লক খাদ্যে স্বয়ম্ভর হয়েছে। অবশিষ্ট ২৮টি ব্লককে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মাননিধি যোজনায় গত ৭ বছরে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৬৪ জন কৃষককে সহায়তা করা হয়েছে। তাদের দেওয়া হয়েছে ৮৪২ কোটি ৬২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ৩ লক্ষ ১,৬৮৫ জন কৃষককে ২,১৪২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। সহায়ক মূল্যে ১ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৬৩ জনকে সয়েল হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে। গত ৭ বছরে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২০৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ভর্তুকী দেওয়া হয়েছে। লেম্বুছড়াতে ফুল চাষের জন্য ইন্দো-ডাচ প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষের কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল ও কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফনীভূষণ জমাতিয়া। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস। মূল অনুষ্ঠানের পর কৃষিমন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে ৩টি মোবাইল সয়েল টেষ্টিং ভ্যান এর যাত্রার সূচনা করেন।