অমরপুর : উন্নয়নই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরিকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী দুই বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ উন্নত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলা।
আজ অমরপুর চন্ডিবাড়ি সংলগ্ন স্কুল মাঠে অমরপুর এবং করবুক মহকুমার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনজাতি কল্যাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং জনগণের আর্থসামাজিক মান উন্নয়ন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মে পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় উদ্বোধন হওয়া এবং শিলান্যাস করা প্রকল্পগুলোর তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, উল্লেখিত এই সময়কালে মোট ৩৬৮ কোটি ২১ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলো জনগণের মৌলিক সমস্যার সমাধানে কাজ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জিডিপি বেড়েছে। গড় মাথাপিছু আয়ের দিক থেকেও ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানে রয়েছে। ত্রিপুরা ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসাবে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যস্তরের হাসপাতাল থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। জিবি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, যা আগে ভাবাই যেত না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিবি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৪১৩ করা হয়েছে। আরও শয্যা সংখ্যা বাড়াবার প্রচেষ্টা চলছে। সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনা এবং মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় সাফল্যের তথ্যাবলি তুলে ধরেন। আগরতলায় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট রিজিওন্যাল ইন্সটিটিউট অব অপথালমোলজি হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য এবারের বাজেটে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জনজাতিদের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি এলাকায় শিক্ষার উন্নয়ন, একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল স্থাপন, রাজ্যের তিন জায়গায় তিনটি ডিগ্রী কলেজের হোস্টেল নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহর আন্তরিক প্রয়াসের ফলেই বু শরণার্থীদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এছাড়াও ভারত সরকার, রাজ্য সরকার এটিটিএফ এবং এনএলএফটি সদস্যদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে এটিটিএফ এবং এনএলএফটি সদস্যগণ অস্ত্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। ফলে ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত বলা যায়। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বোতাম টিপে অমরপুর এবং করবুক মহকুমার ২৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এইসব প্রকল্পে মোট ব্যয়বরাদ্দ প্রায় ২১০ কোটি টাকা।
উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের সাংসদ কৃতিদেবী সিং দেববর্মা এবং বিধায়ক রঞ্জিত দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গোমতী জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক পাঠান লাল জমাতিয়া, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা এবং টিটিএএডিসির কার্যনির্বাহী সদস্যা ডলি রিয়াৎ, অমরপুর নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন বিকাশ সাহা। অমরপুর নগর পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহাকে মঙ্গলচন্ডির ছবি সম্বলিত একটি স্মারক তুলে দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেও বিপুল সংখ্যক মানুষ এই অনুষ্ঠানে সমবেত হন।
এদিকে আজ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে থাকছড়া পঞ্চায়েত অফিসের উদ্বোধন করেন। এরপরে তিনি ছবিমুড়ায় পর্যটন দপ্তর আয়োজিত ছবিমুড়া উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা।