আগরতলা: রাজ্যের সমস্ত জেলা সদর দফতর, মহকুমা সদর দফতর এবং সংযোগহীন জনবসতি এলাকাগুলি ডাবল-লেন রাস্তা সহ জাতীয় সড়কের সাথে সংযুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি আগরতলা শহর এলাকায় ভারতমালা স্কিমের অধীনে প্রায় ৪৪৯ কিলোমিটার একটি রিং রোড প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
ইন্ডিয়ান বিল্ডিং কংগ্রেস (আইবিসি) এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত ৭ বছরে রাজ্যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছে। এতে রাজ্যের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিকাঠামো ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয়। যেকোন রাজ্য বা অঞ্চলের উন্নয়নে পরিকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিকাঠামো প্রাথমিক ক্ষেত্র, শিল্প, পরিষেবা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সামাজিক ক্ষমতায়নের অন্যতম ভিত্তি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যকে নিয়ে গঠিত অষ্টলক্ষ্মীর সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্ষেত্রে রেল, সড়ক নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশে রাস্তা, বিমানবন্দর, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ প্রকল্প, পানীয়জল সরবরাহ এবং নগর পরিকাঠামোর উন্নয়ন অন্যতম চাবিকাঠি। গত ২৩ মে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত নর্থ ইস্ট রাইজিং সামিট এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন উত্তর -পূর্বের অর্থ অষ্টলক্ষ্মী। কারণ এই অঞ্চলে আমাদের আটটি রাজ্য রয়েছে। তিনি বলেছেন উত্তর -পূর্ব অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ডোনার মন্ত্রক গঠন করে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলকে প্রায়শই তার বিশাল হাইড্রো পাওয়ার, পেট্রোলিয়াম এবং গ্যাস সম্ভাবনার কারণে ভারতের পাওয়ার হাউস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই অঞ্চল দেশের ক্লিন এনার্জির লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ত্রিপুরা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ -পূর্ব এশীয় দেশগুলির সন্নিকটে অবস্থান করছে, যা গেটওয়ে হিসেবেও ভূমিকা নিয়ে থাকে। ত্রিপুরা সরকার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর উল্লেখযোগ্য জোর দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, এবারের বাজেটে রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭,০০০ কোটি টাকার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। রাজ্যে পূর্ত দপ্তরের অধীনে মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০,৬১৮.৪২৩ কিমি, যার মধ্যে ১,০৫৭ কিমি রাজ্য জাতীয় সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে ১৭১ কিমি বড় জেলা সড়ক, অন্যান্য জেলা রাস্তা ৪৮৩ কিমি, শহর রাস্তা ১,১৬৭ কিমি এবং গ্রামীণ সড়ক রয়েছে আরও ৭,৭৪০ কিমি। ত্রিপুরায় জাতীয় সড়কের বিস্তৃতি প্রায় ৯২৩ কিমি। আরো চারটি অতিরিক্ত জাতীয় সড়কের জন্য প্রায় ২২৯ কিমি ধরা হয়েছে। ৯২৩ কিমি জাতীয় সড়কের মধ্যে ৫০৯ কিমি ইতিমধ্যে ডাবল লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সমস্ত জেলা সদর, মহকুমা সদর এবং সংযোগহীন জনবসতি এলাকাগুলি ডাবল-লেন জাতীয় সড়কের সাথে সংযুক্ত থাকবে। আগরতলা শহর এলাকার জন্য ভারতমালা স্কিমের অধীনে প্রায় ৪৪৯ কিমি রিং রোড প্রস্তাবিত রয়েছে। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনায় আগরতলা বাইপাস খয়েরপুর থেকে আমতলি, পূর্ব বাইপাস লেম্বুছড়া থেকে খয়েরপুর এবং ওয়েস্টার্ন বাইপাস লেম্বুছড়া থেকে আমতলি পর্যন্ত রয়েছে। আগরতলা ও উদয়পুরে আরো ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে রাধানগর থেকে আইজিএম হাসপাতাল পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারও সাতটি বাইপাস রাস্তা করা হবে। কুমারঘাট, ধনপুর, মনু, আমবাসা, তেলিয়ামুড়া, রানীরবাজার ও জিরানিয়ায় বাইপাস করা হবে।
সেমিনারে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ইন্ডিয়ান বিল্ডিং কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ওপি গোয়েল, ইন্ডিয়ান বিল্ডিং কংগ্রেসের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার চিন্ময় দেবনাথ, পূর্ত দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দেববর্মা সহ অন্যান্য প্রকৌশলীগণ।