আগরতলা: ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আজ আগরতলা টাউন হলে আয়োজিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ৮ নং বড়দোয়ালি বিধানসভার মন্ডল কমিটির উদ্যোগে এই কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে 'পরীক্ষা পে চর্চা' কার্যক্রম শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরীক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া এবং এটা যাতে চাপের বিষয়বস্তু না হয় সেই লক্ষ্যে এই কার্যক্রম সূচনা করেন তিনি। আর মা বাবা কিংবা অভিভাবকরা সবসময় চেষ্টা করেন যাতে ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করুক। আজ এই কার্যক্রমে যেসকল ছাত্রছাত্রীরা ৬০ শতাংশ বা তার অধিক নম্বর পেয়েছে তাদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যারা কম নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকেও শুভকামনা জানান তিনি। আগামীতে তারা যাতে আরো ভালো ফলাফল করতে পারে সেই প্রত্যাশা করেন ডাঃ সাহা। এর পাশাপাশি পড়াশুনায় একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা রাখার আহ্বান জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েও অনেকে বাস্তব জীবনে ভালো করেন। ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায় থাকলে জীবনে সফল হওয়া যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন যেসকল পরিবার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, সেই পরিবারগুলি থেকে ভালো ও মেধাবী ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে নিয়ে আসার। এতে রাজনীতির পঙ্খিল অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে। আগামীদিনে সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য মেধা, জ্ঞান ও বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করতে হবে কৃতি শিক্ষার্থীদের। রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তর গুণগত শিক্ষা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেধার কোন অভাব নেই। তাদের শুধু দরকার একটা সঠিক প্ল্যাটফর্ম। আর সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে জাতীয় শিক্ষা নীতি (ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি) ২০২০ চালু হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও স্কুল কলেজে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। আগে নালন্দা, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভের জন্য বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে আসতো। বর্তমান জাতীয় শিক্ষা নীতি দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও পরম্পরার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে উপকৃত হবে ছাত্রছাত্রীরা।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় নিপুণ ত্রিপুরা পাঠক্রম শুরু হয়েছে। ৯ সপ্তাহের জন্য মডিউল বিদ্যাসেতু শুরু হয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে বন্দে ত্রিপুরা ও ৫টি ই বিদ্যা চ্যানেল শুরু হয়েছে। ৮৫৪টি স্কুলে স্মার্ট ক্লাশ চালু হয়েছে। ২২৭টি স্কুলে থিঙ্কারিং ল্যাব শুরু হয়েছে। সিএম সাথ প্রকল্পে এবছর প্রায় ২০০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৩৭৮টি স্কুলে টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে এনসিইআরটি পাঠক্রম চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলগুলিকে ইংলিশ মিডিয়ামে উন্নীত করা হয়েছে। সুপার ৩০ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১ জন আইআইটি, ৩ জন এনআইটি ও ৩ জন এমবিবিএস এ সুযোগ পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার চালু করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্র চালু করা হয়েছে। ৪৪টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া আরো প্রায় ৩০টি স্কুলে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এজন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ২৬৪ কোটি টাকা। এবছর মাধ্যমিকে প্রায় ৩৪৫টি স্কুলে ১০০% পাশ করেছে। মোট পাশের হার ৮৬.৫৩%। উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯টি স্কুলে ১০০% পাশ করেছে। পাশের হার ৭৯.২৯%।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সদর আরবান জেলার সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য, বড়দোয়ালি মন্ডলের সভাপতি শ্যামল কুমার দেব, পুর নিগমের কর্পোরেটর অভিজিত মল্লিক, অলক রায়, রত্না দত্ত, জাহ্নবী দাস চৌধুরী সহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। অনুষ্ঠানে বড়দোয়ালি বিধানসভা এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ ও তার অধিক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা ও অন্যান্য অতিথিগণ।