আগরতলা: ত্রিপুরা রাজ্যে পর্যটন ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যের পর্যটন শিল্পের আরো প্রচার ও প্রসার করতে হবে। মহারাজাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পর্যটনের নিদর্শন ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল আগের সরকার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এখন সেগুলির পুনরুদ্ধার ও নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলছে।

আজ সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগরস্থিত কসবা কালী মন্দির পরিসরে কমলাসাগর এবং ভার্চুয়ালি চতুর্দশ দেবতা মন্দিরের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এর আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আগে জাতীয় সড়ক থেকে কসবেশ্বরী মন্দিরে আসতে হলে রাস্তার জন্য অসুবিধা হতো। তাই এই সড়কের উন্নয়নে আমি পূর্ত দপ্তরের সচিব ও ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলি। সে মোতাবেক প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের উন্নয়ন করা হয়। আর এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে মায়ের মন্দিরে আসা যায়। এডিবির আর্থিক সহায়তায় কসবেশ্বরী মন্দির ও চতুর্দশ দেবতা মন্দির নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবারই পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তাঁর নির্দেশিত দিশায় আমরাও পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এবারের বাজেটে পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া সহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এডিবি ছাড়াও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কারণ টাকা খরচ করলেই টাকা আসবে। পর্যটন ক্ষেত্রের সৌন্দর্যায়নের সাথে সাথে বাইরে থেকেও মানুষ এখানে আসবেন। এতে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবন জীবিকা আরো উৎকৃষ্ট মানের হবে। আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়া দুটি ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন যাতে উচ্চমানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। কসবেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত ভাদ্র মেলায় প্রচুর পরিমাণে মানুষের সমাগম হয়। একইভাবে চতুর্দশ দেবতা মন্দিরে আয়োজিত ৭দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খারচি মেলা ও উৎসবেও লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আমি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৭৭২ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এই সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়েছে। আগে পর্যটনকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও সেভাবে কাজ করা হয় নি। কিন্তু বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য গুরুত্ব দিয়েছে।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে সিকিমের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীতে এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে ত্রিপুরা। উদয়পুরের বনদুয়ারে কিছুদিন আগে ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের শিলান্যাস করা হয়েছে। সেটি গড়ে উঠলে রাজ্যের পর্যটন শিল্প আরো বিস্তৃত হবে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভে প্রত্যেক রাজ্যে অন্তত একটা বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য গুরুত্ব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে বিদেশী মুদ্রাও বৃদ্ধি পাবে। কিছুদিন আগে টাটা গ্রুপের সঙ্গে রাজ্য সরকারের একটি মৌ হয়। এর মাধ্যমে পুরনো রাজভবন (পুষ্পবন্ত প্যালেস) এ একটি রাজ ঘরানার আদলে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ করা হবে। প্রায় ১০০টির মতো রুম হবে সেখানে। এরমধ্যে চারটি এক্সক্লুসিভ রুম থাকবে। এই রুমে থাকার জন্য প্রতিদিন দেড় থেকে দু লক্ষ টাকা খরচ হবে। টাটা গ্রুপের চেইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিমান যোগে মানুষ সেখানে আসবেন। আর তারা সেখানে আসলে রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন। প্রায় ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে সেখানে। রাজ্যের আরো অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির প্রসার ও প্রচার করতে হবে। ইকো ট্যুরিজমের উপরও গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। এর পাশাপাশি আরো নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র খুঁজে বের করতে হবে পর্যটন দপ্তরকে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, সিপাহীজলা জেলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা, সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা, পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রশান্ত বাদল নেগি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এছাড়া চতুর্দশ দেবতা মন্দির থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক রতন চক্রবর্তী।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *