আগরতলা: আগামীদিনে মোট জনসংখ্যার ১% সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মানবিকতার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী স্বেচ্ছাসেবকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

আজ আগরতলার এডি নগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ৬৩তম সর্বভারতীয় সিভিল ডিফেন্স ও হোমগার্ড দিবস অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এবছর সিভিল ডিফেন্স, হোমগার্ড, আপদা মিত্র ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্যারেড হাত বছরের তুলনায় অনেক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী বাহিনী দিবস পালন করা হয়। এবছর আমরা ৬৩তম সর্বভারতীয় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করছি। মানবিকতার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী স্বেচ্ছাসেবকদের নিঃস্বার্থ কাজ ও আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

৬৩তম সর্বভারতীয় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী বাহিনী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সিভিল ডিফেন্স, হোমগার্ড, আপদা মিত্র সহ সকল স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। বিপর্যয় ও দুর্যোগ মোকাবিলায় আপনাদের অসাধারণ সেবামূলক ভূমিকার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অসহায় আর্ত মানুষের পাশে আপনাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি নিঃসন্দেহে সেসব মানুষের মনে ভরসার সৃষ্টি হয়, যা সেবার মহান দৃষ্টান্ত।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতে ১৯৬৮ সালে অসামরিক প্রতিরক্ষা আইনের মর্যাদা পেলেও ত্রিপুরায় ১৯৭১ সালে অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বীকৃতি পায়। আমাদের অসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়টি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারপর ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং পরবর্তীতে ২০২০ সালে রাজস্ব দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজস্ব দপ্তরের অধীনে আসার পর ত্রিপুরায় সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রম ২০২১ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের সমস্ত জেলায় সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে ৮টি জেলায় সিভিল ডিফেন্স রয়েছে।

এডিএম ও কালেক্টরদের সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল ডিফেন্স নিয়ামক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের ডিরেক্টরকে রাজ্যে সিভিল ডিফেন্সের ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের রাজ্যে প্রায় ৫ হাজার প্রশিক্ষিত সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। সেন্ট্রাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং জেলাস্তরে চিহ্নিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত প্রশিক্ষন কর্মসূচি চলছে।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীদিনে মোট জনসংখ্যার ১% সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের জন্য রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ছাড়াও এবছর ভারত সরকারের সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থন নিশ্চিত করতে এবং তাদেরকে স্বেচ্ছায় সেবার প্রতি উৎসাহিত করতে রাজ্য স্তরে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের সাধারণ এবং বিপর্যয় উভয় পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হবে। সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবকদের মতো এখন সমস্ত জেলায় আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন। তাদেরকেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ভারত সরকারের যুব আপদা মিত্র প্রকল্পে এনএসএস, এনসিসি, মাই ভারত, ভারত স্কাউট এন্ড গাইডসের প্রায় ১,৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে প্রশিক্ষন দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের রাজ্যে প্রায় ২,৫০০ জন প্রশিক্ষিত আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। রাজ্যের হোমগার্ড সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরাও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন।

সিভিল ডিফেন্স ও আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকগণ এখন নিয়মিতভাবে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব, দুর্যোগের সময় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্য, সাধারণ জনগনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা গড়ে তোলা এবং প্রশাসনের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সিভিল ডিফেন্স ও আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনগনের জরুরি পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত বছরের আগস্ট মাসে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে সিভিল ডিফেন্স ও আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকদের নিষ্ঠা পরিলক্ষিত হয়েছে।

জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার প্রশংসনীয় কাজের জন্য জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। ত্রিপুরাকে বিপর্যয় সহনশীল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সিভিল ডিফেন্স ও আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে শপথ বাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *