আগরতলা: নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচিও সংঘটিত করছে ত্রিপুরা পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে।

সোমবার সকালে আগরতলার উমাকান্ত মিনি স্টেডিয়ামে ৭৩তম বি.এন মল্লিক মেমোরিয়াল অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-২৫ (পুরুষ ও মহিলা) এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যে প্রথমবারের মতো এধরণের সর্বভারতীয় পুলিশ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করায় আমি রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জনকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবাংলায় এধরণের ফুটবল টুর্নামেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই টুর্নামেন্টে ৪৬টি টিমের অংশগ্রহণ আমাদের জন্য খুবই গর্বের। এজন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা অংশগ্রহণকারী সকলকেই আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। এখানে প্রায় ১,৪০০ প্রতিযোগী যোগদান করেছেন। আর এই টুর্নামেন্ট চলবে প্রায় ১২ দিন পর্যন্ত। রাজ্যের পশ্চিম, সিপাহীজলা ও গোমতী এই ৩টি জেলার ৫টি জায়গায় এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। কারণ একটি স্টেডিয়ামে এই আয়োজন সম্ভব নয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় এখন ৭টি জায়গায় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক দপ্তরের পক্ষ থেকে সিন্থেটিক ফুটবল গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের টুর্নামেন্ট একটা মেগা ইভেন্ট। এধরণের মেগা ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় এবং এভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠে। হতে পারে এই সম্পর্ক আগামীদিনেও অটুট থাকবে। এর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে নিজেদের মধ্যে মোবাইল ফোন নম্বর বিনিময় করা যেতে পারে। যাতে আগামীদিনে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করা সম্ভব হয়। আর এই বন্ধনের মধ্য দিয়ে এই ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন সফল হতে পারে। বি এন মল্লিকের নামে যে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন এখানে করা হয়েছে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত। তিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থায় (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই এধরণের ক্রীড়া টুর্নামেন্টের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। আজ তাঁর নামেই এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা পুলিশ সম্পর্কে সবসময় একটা নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকি। সবাই পুলিশকে ভয় পায়। পুলিশ সম্পর্কে অন্যকিছু ভাবেন মানুষ। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা প্রদান ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। সেই সঙ্গে পুলিশ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিও করে থাকে। সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা পুলিশ একটি পুরনো বাহিনী। কিছুদিন আগে এখানে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন করা হয়েছে। সেখানে আমরা পুলিশের পেশাগত দায়দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যান্য উদ্ভাবনী কর্মকান্ডও প্রত্যক্ষ করেছি। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আসর থেকে অনেক মেডেল অর্জন করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এনসিআরবি’র রিপোর্ট মোতাবেক দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক থেকে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। এজন্য আমি ডিজিপি এবং তাঁর টিমকে ধন্যবাদ জানাই। রাজ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলি যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে তাতে গনতন্ত্র সম্পর্কে মানুষের আস্থা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন না হলেও দেশেরও উন্নয়ন হবে না। ত্রিপুরার জন্য হিরা মডেল দিয়েছেন তিনি। এজন্য এখন রাজ্যে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। আর এসব একমাত্র সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য। আগে ট্রেন পরিষেবা ছিল না রাজ্যে। শুধু মিটারগেজ ট্রেন ছিল। এখন ব্রডগেজ পরিষেবা সাব্রুম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। এখন রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে। ত্রিপুরায় এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের আগরতলার এমবিবি এয়ারপোর্ট উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা দেশের মধ্যে অন্যতম সুন্দর এয়ারপোর্ট হয়েছে। তাই এবারের টুর্নামেন্টে যারা বাইরে থেকে এসেছেন তারা শুধু খেলার উদ্দেশ্যে নয়, ত্রিপুরাকে ঘুরে দেখারও আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। আমি ত্রিপুরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বলবো খেলোয়াড়দের রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখানোর বন্দোবস্ত করার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, ডিজি (ইন্টেলিজেন্স) অনুরাগ, এডিজি ট্রেনিং রাজা মুরাগন, এডিজি জি এস রাও সহ আরক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এই চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *