আগরতলা: মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আজ তিপ্রা মথা পার্টির তীব্র সমালোচনা করে বলেন যে বিজেপিকে ত্রিপুরা জনজাতি এলাকা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদে (টিটিএএডিসি) অনুমতি দেওয়া হবে না বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাই তিনি বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টিকে জনজাতি এলাকায় কর্মসূচি পালন ও জনজাতির জন্য কাজ করা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।

ডাঃ সাহা আরো বলেন, ব্ল্যাকমেইলিং ও হুমকির রাজনীতি আর চলবে না।আজ খোয়াই জেলার বাইজল বাড়িতে প্রদেশ বিজেপি মহিলা মোর্চার উদ্যোগে জনজাতি মহিলাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, জনজাতি মহিলাদের নিয়ে আয়োজিত এই কার্যক্রম ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে। আমাদের বিজেপির অভিভাবকগণ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দলীয় কর্মসূচি পালন করার জন্য কেউ আমাদের বাধা দিতে পারবে না। আমরা আলোচনা চাই, অশান্তি চাই না।

আমরা শুধু আইনের মাধ্যমে ক্ষমতা ব্যবহার করবো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়। বিজেপি কখনোই অসংযমে বিশ্বাস করে না। অন্য দলগুলো ভিন্ন আচরণ করতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে পারে। কিন্তু আমাদের দলের নেতারা কখনোই তা করবেন না। অপারেশন সিন্দুর এর উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করবে বলে দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করত।

একইভাবে আরেকটি দল সিপিএমে যাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করছে। ২০১৮ সালে বিজেপি কীভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তা সবাই জানেন। প্রথমে তিপ্রাল্যান্ড, তারপর গ্রেটার টিপ্রাল্যান্ড এবং এখন ওয়ান নর্থইস্ট। যে কেউ এটি করতে পারে, যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, কিন্তু সবটাই একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে হওয়া উচিত।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে নারী, যুব, দরিদ্র ও কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা একই দিশায় কাজ করছি। যে রামচন্দ্রঘাটের বিধায়ক একসময় আমার প্রশংসা করতেন, আর এখন মুখ্যমন্ত্রীকে গালিগালাজ করেন। আমরা নতুন ত্রিপুরা গড়তে আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই, কিন্তু আপনারা জোটের শরিকের নিয়ম মানছেন না। যেখানে আমরা নিয়ম মেনে চলছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জোট শরিকদের নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন এবং আমরা সেখানে এমন আচরণ কখনও দেখিনি।

সভায় তাঁর বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেন কীভাবে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হলো যে এডিসি-তে বিজেপিকে অনুমতি দেওয়া হবে না? আমরা এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করব না। আমরা এখানে মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং আগামী দিনেও কাজ করে যাবো। বিগত বছরগুলিতে রামচন্দ্রঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য ১২৬ কোটি টাকা দিয়েছে আমাদের সরকার। মানুষ ধীরে ধীরে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে বিজেপি ২০১৮ সালে আইপিএফটি নিয়ে সরকার গঠন করেছিল এবং ২০২৩ সালে আবার জয়লাভ করেছিল। ডাঃ সাহা বলেন, ককবরক স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। শ্যামাচরণ ত্রিপুরা কমিটি ১৯৯০ সালে গঠিত হয়েছিল, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে রোমান লিপি দেওয়া যেতে পারে। তাহলে কেন রোমান লিপি চালু করা হলো না? পবিত্র সরকার কমিটি ২০০৪ সালে সিপিএম শাসনামলে গঠিত হয়েছিল, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ককবরকের জন্য কোনও স্ক্রিপ্ট প্রস্তাব করা হয়নি।

তখন চুপ করে ছিলেন কেন? তারা হিন্দি নিয়ে কথা বলতে পারে, কিন্তু দেবনাগরী লিপির অনুমতি দেবে না। তারা জোরপূর্বক রোমান লিপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনজাতি সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে। তারা উস্কানি দিয়ে দল চালাচ্ছে এবং মানুষকে উস্কানি দিয়ে বিভ্রান্ত করার কারখানা তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সিপিএম শাসনামলে বহু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আর আমরা নিউ ত্রিপুরায় খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতা চাই না। সিপিএম তাদের আমলে রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছিল। আমরা এখন ত্রিপুরায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা সবাইকে শান্তির বার্তা দিতে চাই। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি। জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়ন আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, ত্রিপুরা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যানী সাহা রায়, বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রদেশ সভানেত্রী মিমি মজুমদার, বিজেপির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, প্রদেশ সম্পাদক ডেভিড দেববর্মা, বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *