আগরতলা: পৃষ্ঠা প্রমুখদের উপর ভারতীয় জনতা পার্টির অনেক ভরসা। নেতৃত্বের মধ্যেকার বিশ্বাসের মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টি আরো শক্তিশালী হবে। আর কমিউনিস্টরা বাধ্য হয়ে মুখোশ পরে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ান। কল্যাণপুর গনহত্যা মামলার সঙ্গে জড়িতরা এখন মুখোশ পরে জ্ঞান বিতরণ করছে।

আজ মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী স্কুলের মাঠে আয়োজিত মোহনপুর মন্ডলের পৃষ্ঠা প্রমুখ সম্মেলনে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানের এর পেছনে মূল কারিগর হচ্ছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রতন লাল নাথ। আমাদের পার্টি অন্যান্য পার্টির মতো না। গম্ভীর হয়ে বসে থাকা নয়। যেটা কমিউনিস্ট পার্টিতে রয়েছে। তাদের দেখে মনে হয় যেন সব তাত্বিক নেতা। কিন্তু আমাদের তাত্বিক নেতার দরকার নেই। আমরা সাধারণ মানুষ। সাধারনে বিশ্বাস করি। সাধারণভাবে চলার চেষ্টা করি। নিজের রুটকে ভুললে চলবে না।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে বরাবরই আমি কমিউনিস্ট বিরোধী ছিলাম। এই সম্মেলনে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের প্রেক্ষাপটে কি কি হয়েছিল সেসব ঘটনাবহুল তথ্যও এদিন তুলে ধরেছেন বর্তমান চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের পর আমাকে বিস্তারক হিসেবে একটা জায়গায় পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে আমাকে পৃষ্ঠা প্রমুখ ইনচার্জ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আবার মেম্বারশিপ ড্রাইভের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে আমাকে টার্গেট জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কতজন মেম্বার বানাতে পারবো। আমি কিছু না জেনে ৩ লাখ মেম্বার করার কথা বলে দিই। যদিও পরবর্তী সময়ে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির ৭ লক্ষ মেম্বার করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন যে আমাদের মধ্যে অনেকে বিভাজন সৃষ্টি করে সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। কমিউনিস্টরা গণতন্ত্র মানে না। এরপরও বাধ্য হয়ে মুখোশ পরে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ান। ডাঃ সাহা বলেন, পৃষ্ঠা প্রমুখ, মন্ডল সভাপতি, জেলা সভাপতি সহ অন্যান্য নেতৃত্বের মধ্যে বিশ্বাস শব্দটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এই বিশ্বাস থাকলেই আমাদের পার্টি আরো শক্তিশালী হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যতোই ধমকানো চমকানো হোক, যারা সারেন্ডার বাহিনী আছে তাদেরকে উস্কিয়ে কিংবা তাদের উপর ভিত্তি করে আগামীদিনে মনে করছে ছাড় পাবে। কিন্তু ছাড় পাবে না। আমাদের নেতৃত্ব রয়েছেন। আমাদের অভিভাবক রয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। আমাদের অভিভাবক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর সারা পৃথিবীকে যিনি দেখে রাখেন সেই অভিভাবক হচ্ছেন যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুতিন দিন আগে কল্যাণপুরে গিয়ে আমার চোখে জল এসেছিল। কিভাবে নিরীহ ২৬ জন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষকে রাতের বেলায় নৃশংসভাবে একে রাইফেলের গুলিতে খুন করা হয়েছিল। এখনো সেই বর্বর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমস্ত মানুষের মধ্যে আক্রোশ জমে রয়েছে। আর সিপিএম জমানায় শুধু দক্ষিণ জেলাতেই ৬৯ জন খুন হয়েছিলেন।

ত্রিপুরার যেকোন জায়গা সেই সময় খুনের সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছিল। নির্বাচনের আগে একবার, আর নির্বাচনের পরে আরো একবার সন্ত্রাস হয়েছিল। আমি সিপিএমের এক একজন বড় বড় নেতাকে দেখেছি। তারা যে তাত্বিক কথা বলেন, আমি বলবো আমাদের কারণে তাদের উত্থান। তাদের সময়ে ঘুম থেকে উঠলেই জিন্দাবাদ শুনতে হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ।

সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টিতে আমরা ভারত মাতাকে সম্মান করি। রাষ্ট্রবাদী চিন্তাধারায় আমরা চলি। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ও পণ্ডিত দীন দয়ালকে স্মরণ করে আমরা মঞ্চে বসি। ১৯৮০ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি তৈরি হয়। সেই থেকে ২/৩ জন এমপি (সাংসদ) নিয়ে পথচলা শুরু হয়। আর এখন ২৪০ জন এমপি। এরআগে ছিল ৩০৩। ডাঃ সাহা বলেন, পৃষ্ঠা প্রমুখদের উপর ভারতীয় জনতা পার্টির অনেক ভরসা। প্রলোভন দিয়ে কার্যকর্তা তৈরি করা যায় না। কাজের মধ্য দিয়ে কার্যকর্তার পরিচয়। সমর্পণের ভাবনা থাকলেই পার্টি করা যায়।

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোদি আছেন বলে সবই সম্ভব। ২০৪৭ এ বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরাও ২০৪৭ এ বিকশিত ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য আমরা রোড ম্যাপ তৈরি করেছি। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। আর এটাকে প্রথম স্থানে নিয়ে আসতে হবে। কল্যাণপুর গনহত্যা মামলার সঙ্গে জড়িতরা এখন মুখোশ পরে জ্ঞান বিতরণ করছে। সারেন্ডার করলেও আইন অনুযায়ী খুন, ধর্ষণ মামলায় কিন্তু কোন মাফ নেই। আমি কল্যাণপুরে গনহত্যা মামলায় ন্যায় বিচার দেওয়ার জন্য কথা দিয়ে এসেছি। নতুন ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, এলাকার বিধায়ক তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, বিধায়ক ভগবান দাস সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *