আগরতলা: গায়ের জোর আর সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতি করা যায় না। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। রাজ্যে ভয়ের রাজনীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। গায়ের জোর দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টাকে কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না।

                                 আজ মান্দাই মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত কার্যকর্তা সম্মেলনে যোগদান করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।


                              সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমার সবসময় মনে হয় জনজাতিদের চাইতে সাহসী কেউ হতে পারে না। জনজাতিরা অনেক বেশি সাহসী। কিন্তু এই সাহসের অর্থ এই নয় যে কারোর মাথায় ডান্ডা মারা। সাহসের অর্থ হচ্ছে যেকোন বিষয়ে তার পারদর্শিতা সাহসের সঙ্গে বলা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ থাকা। যেটা জনজাতিদের মধ্যে রয়েছে। সমাজ সংস্কার, গান বাজনা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সহ সবক্ষেত্রে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর তুলনায় একটু আলাদা জনজাতিরা। তাই জনজাতিদের এত ভয় পাওয়ার কি আছে? 


                               মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সুদীর্ঘ বছর ধরে একটা ভয়ের রাজনীতি কায়েম ছিল। এর থেকে মুক্তি পেতে হবে। ভয়ের রাজনীতি থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কমিউনিস্টরা যেখানে যেখানে রাজত্ব করেছে সেখানে খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় শাসন করেছে তারা। সেই জায়গায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর গোটা দেশে রাজনীতির পরিভাষা পাল্টে গিয়েছে। এখন ভারতবর্ষকে একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর দিশায় কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ত্রিপুরায় একটা অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। 

ডাঃ সাহা বলেন, যেকোন জায়গায় রাজনীতি করার অধিকার আছে আমাদের। এখন রাজতন্ত্র নেই, এখন গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে যে কেউ যেকোন জায়গায় যেতে পারে। শুধু গায়ের জোর আর সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে কতদিন চলবে? টাকারজলার ঘটনায় একজন ৭৫ বছর ঊর্ধ্ব মহিলার পায়ে দায়ের কোপ দেওয়া হয়েছে। এটা কোন অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। এটা কোন ধরণের রাজনীতি?

                               মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৮ সালে কমিউনিস্টদের উৎখাত করে ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেক্ষেত্রে আমরা কেন অন্যদের ভয় পাবো? যেখানে কমিউনিস্টদের সরিয়ে দিতে পারি, সেখানে যেকোন পার্টি যদি গায়ের জোর দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে, তবে সেটা কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা যায় না। সরকার সেখানে যা যা করার করবে। আমি বারবার বলছি রাজনীতি যদি রাজনীতির মতো করা যায় তবে ভালো। এতে আমাদের সহাবস্থান থাকবে। কিন্তু যদি দেখা যায় রাজনীতির নামে নানা কৌশল অবলম্বন করে আমাদের উপর চাপ আনা হয়, সরকারকে কালিমালিপ্ত করা হয়, পার্টির কালিমালিপ্ত করা হয়, তবে সেটা আমরা কোন অবস্থায় বরদাস্ত করবো না। 

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আবার আপনাদের অভয় দিচ্ছি। কোন ভয় নেই। আমি অত্যন্ত খুশি যে গত কিছুদিন ধরে আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে জনজাতি মা বোনদের উপস্থিতির সংখ্যা অনেক বেশি। তারা বুঝতে পারছেন। তাই ভারতীয় জনতা পার্টিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য মা বোনেদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। রাজ্যে এরআগেও অনেক সরকার ছিল। যদিও তারা মহারাজাদের কোন সম্মান দেয়নি। আমরা এসে মহারাজাদের কিভাবে সম্মান দিতে হয় সেটা করে দেখিয়েছি।

                                  সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, সদর গ্রামীণ জেলার সভাপতি গৌরাঙ্গ ভৌমিক, মান্দাই মন্ডলের সভাপতি অভিজিত দেববর্মা সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। এই সম্মেলনকে ঘিরে ১০৯টি পরিবারের ৩৩৯ জন ভোটার এদিন ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। তাদেরকে দলে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *