আগরতলা: ১৯৯৫ সালে তৈরি ওয়াকফ আইনের দূর্বলতার দরুন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর গরীব মুসলিম জনগণ। সেই সঙ্গে কতিপয় নেতা কর্তৃক ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার, ৪০ নং ধারার অপব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা জবরদখল সহ আরো অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫ পাশ হয়। ওয়াকফ সংশোধিত আইন নিয়ে মুসলিম সমাজের নাগরিকদের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ আগরতলার রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত জনজাগরন অভিযানে সম্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ওয়াকফ বিল ২০২৫ আসার পর এই সম্পর্কে ধারনা বেড়েছে। আজকের এই কার্যক্রমে এখানে বসে অনেক কিছু জানলাম। আজকের এই কার্যক্রমের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ওয়াকফ সম্পর্কিত বিষয়ে সচেতন করা। আর বিরোধীদের কাজই হচ্ছে যেকোন বিষয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। যেকোন ভালো কাজে তারা বাঁধা সৃষ্টি করবেই। তিন তালাক একটা কুপ্রথা ছিল। কিন্তু যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই তিন তালাককে অবলুপ্ত করেছেন। অথচ এনিয়ে কত কথা হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরেও ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী যে কাজ করছেন সেটা মানুষ বুঝতে পারেন। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস ভাবনা নিয়েই তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যারা আছেন তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যা করছেন সেটা দেশ ও আপনাদের ভালোর জন্যই করছেন। আর পৃথিবীর বহু জায়গায় মুসলিম দেশগুলিতে ওয়াকফ বোর্ড নেই। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর গরীব মুসলিমদের ভালোর জন্য এটা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম মহিলাদের কল্যাণে এই কাজ করেছেন তিনি। ওয়াকফের নামে কোন কিছু দান করা হলে সেটা আর ফেরত যোগ্য নয়। অর্থাৎ সেটা ঈশ্বরের নামে দান করা হয়েছে। যা ফেরত পাবেন না। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ বোর্ড আনেন। আর ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ বোর্ডের আইন তৈরি হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ২০১৩ সালে। যখন ওয়াকফকে কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং ওয়াকফের সম্পত্তি না হলেও সেটা দাবি করা হয়। এতে কতিপয় নেতার জন্য এই আইনে ব্যক্তিগত বেশকিছু সুবিধা হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের পকেটে ঢুকে গেছে। রেলওয়ে ও সেনাবাহিনীর পরে ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু ওয়াকফের কাছে এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও সেগুলি জনকল্যাণে তেমনভাবে কাজে আসছে না।
আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, ওয়াকফ সম্পত্তির যথাযথ নজরদারি ও নিরীক্ষণের অভাবে ২০১৩ সালে ১০,৩৮১টি মামলা বকেয়া ছিল। যেটা এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২১,৬১৮টি মামলায়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুসারে, ২৫ টি রাজ্য/কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ওয়াকফ বোর্ডগুলিতে মোট ৫,৯৭৩টি সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উদ্বেগের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনি কি ভাবতে পারেন যে এই জাতীয় সম্পত্তি কীভাবে ওয়াকফের অধীন হতে পারে? আর কিছু লোক এই বিষয়গুলি নিয়ে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। তবে আমরা সবাইকে বলছি যে আমরা আপোস করব না। আমি পুলিশকে ওয়াকফ ব্যবহার করে অশান্তি তৈরির চেষ্টায় যুক্ত এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিছু জায়গায় এই জাতীয় অনভিপ্রেত ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে। এই বিলটি খুবই প্রয়োজনীয় এবং এজন্য আমি ত্রিপুরার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই ওয়াকফ বিলটি মুসলিম মহিলাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের উন্নতি করতে সক্ষম হবে। এর পাশাপাশি দুর্নীতি রোধে ওয়াকফ রেকর্ডগুলিকে ডিজিটালাইজ করতে, পারিবারিক বিরোধ ও উত্তরাধিকারের অধিকারের জন্য আইনী সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। আগে এতে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না এবং আমরা এখন স্বচ্ছতা আনতে কাজ করছি।
এদিন এই কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, দলের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক অমিত রক্ষিত, সংখ্যালঘু মোর্চার প্রদেশ সভাপতি বিল্লাল মিঞা সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া এই সচেতনতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন জেলা সভাধিপতি থেকে শুরু করে মন্ডল সভাপতি সহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব।