আগরতলা :রোমান হরফ নিয়ে ফের উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্য। আগামী ১৮ ডিসেম্বর আগরতলা সহ সারা রাজ্যে মিছিল করতে ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর।
মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা শনিবার আগরতলার রবীন্দ্র ভবনের সামনে জনজাতি মোর্চার সমাবেশে দাঁড়িয়ে রোমান হরফ নয়, দেব নগরী হরফের পক্ষেই নিজের মত দিয়েছেন। রোমান হরফ ইংরেজদের হরফ। আর এর প্রতিবাদে মাঠে নামছে ছাত্র সংগঠনের আড়ালে তিপ্রা মথা।
হিমঘর থেকে টেনে বের করে ফের রোমান হরফ নিয়ে সরব হচ্ছে মথার ছাত্র সংগঠন। রোমান হরফ না হওয়ার ফলে তিপ্রাসা ছাত্রছাত্রীরা ঠিকভাবে পরীক্ষা দিতে পারছে না।বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষায় বাংলা লিপি ব্যবহারে ক্রমাগত বিভ্রান্তি এবং হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।অথচ বেশির ভাগ তিপ্রাসা শিক্ষার্থীর রোমান লিপি পছন্দ।
মঙ্গলবার রাজধানীর চন্দ্র মহলে মথার ছাত্র সংগঠন টিএসএফ ও টি আই এস এফ দুটি ছাত্র সংগঠন যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে ১৮ই ডিসেম্বর আন্দোলনের ঘোষণা করেন। ছাত্রনেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রোমান স্ক্রিপ্টের দাবিতে আন্দোলন করছে মথার ছাত্র সংগঠন। ছাত্র নেতাদের বক্তব্য হল, রোমান লিপি ককবরক লেখার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গৃহীত এবং পছন্দের পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। কারণ এটি ভাষার সিলেবাস এবং শব্দ ভান্ডারের সাথে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ত্রিপুরার ককবরক ভাষীরা এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে এবং শিক্ষার্থীরা কয়েক দশক ধরে পরীক্ষায় এটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সওয়াল করে আসছে।কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়নি।তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা উচিত বলেও মনে করেন ছাত্রনেতারা। ১৮ ডিসেম্বর আগরতলার আস্তাবল ময়দানে জমায়েত হয়ে একটি মিছিল মিউজিয়াম পর্যন্ত যাবে। এই মিছিলে দুই সংগঠনের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করবে।
এই কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হবে রোমান স্ক্রিপ্টের দাবি অবিলম্বে পূরণ করতে হবে। ছাত্র নেতারা অভিযোগ করেন রোমান স্ক্রিপ্ট এর দাবি নিয়ে শাসক দল বিজেপি নাটক করছে। কিন্তু কোন সমাধান হচ্ছে না। বিজেপি বলে থাকে সবকা সাথ সবকা বিকাশ।ছাত্র নেতাদের অভিযোগ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোন বিকাশই হচ্ছে না।
নেতৃত্ব আহ্বান জানান, ত্রিপুরায় অন্য যেসব সংগঠন রয়েছে, যারা রোমান স্ক্রিপ্টের দাবিকে সমর্থন করে তারা যেন এই কর্মসূচিতে যোগদান করেন। ছাত্র নেতৃত্বরা বলেন বিজেপির ছোট ছোট কার্যকর্তা রোমান স্ক্রিপ্ট নিয়ে একেক সময়ে একেক রকম বিবৃতি দিচ্ছে। তাদের এই বিবৃতির কোন মূল্য নেই। কিন্তু রাজ্যের প্রধান প্রশাসক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কিছুই বলছেন না। তারা বলেন রোমান স্ক্রিপ্ট এর দাবি মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছে করলেই পূরণ করতে পারে।
ছাত্র নেতৃত্ব বলেন কেন্দ্রের বিজিবি সরকার নয়া শিক্ষানীতির নামে শিক্ষাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলছেন।কিন্তু ত্রিপুরার ককবরক বাসীদের জন্য রোমান স্ক্রিপ্ট কেন চালু করা হচ্ছে না। রাজ্যের জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে যেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রোমান স্ক্রিপ্ট এর দাবির সমস্যার সমাধান করেন এমনটাই বলছেন মথার ছাত্র নেতৃত্বরা।
একদিকে মন্ত্রিসভায় অংশগ্রহণ, অন্যদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ডাক এই দ্বৈত অবস্থান তিপ্রা মথার রাজনৈতিক কৌশল নাকি নিছক ক্ষমতার চাপ তৈরির চেষ্টা, তা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকারি থেকে বিরোধিতার এই রাজনীতি শেষ পর্যন্ত শাসক জোটের স্থিতি শীলতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
