আগরতলা, ২৭ এপ্রিল: ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ১৬,৯৪২ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি প্রদান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ৪৭৯টি পদে নিয়োগ পত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আজ ৪৭৯টি পদে অফার দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে ১২৬ জন, পূর্ত দপ্তরে ১৯৭ জন এবং রাজ্য সমবায় ব্যাংকে ১৫৬ জন রয়েছেন। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে এই চাকরি পাচ্ছেন চাকরি প্রাপকরা। এজন্য কারোর কাছে যেতে হয়নি। অথচ আগে মিছিল মিটিংয়ে না গেলে সেই সুযোগ পাওয়া যেত না। তাও আবার বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু আমাদের সরকার আসার পর স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি প্রদানের পলিসি নেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার কারণেই নিয়োগ পত্র পাচ্ছেন আপনারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকারও। আজকের অফার প্রাপকদের কর্মজীবন সুন্দর ও উজ্জ্বল হোক বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত অফার প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে জেআরবিটির মাধ্যমে ৩৭টি দপ্তরে ২,৪৩৬ জন মাল্টি টাস্কিং স্টাফ (গ্রুপ ডি) পদে, স্বাস্থ্য দপ্তরের ফার্মাসিস্ট/ ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে ৩৬৯ জনকে অফার দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে সেদিন ২,৮০৬ জনকে নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। যা ত্রিপুরায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল টিপিএসসির মাধ্যমে ১১ জনকে স্মল সেভিংস ইন্সপেক্টর পদে অফার দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৩,২৯৬ জন সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এছাড়াও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, এগ্রি এসিস্ট্যান্ট সহ ইত্যাদি পদে রাজ্য সরকারের ৩৫টি দপ্তরে ১,৯৮০ জনকে নির্বাচিত করে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ১৬,৯৪২ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রয়োজন ভিত্তিক সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আউটসোর্সিং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হয়েছে ৫,৭৭১ জনকে। সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ২,৯৮৭ জনকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত করা হয়েছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের মাধ্যমে গত তিন বছরে রাজ্যের শিল্প এলাকাগুলিতে ১,৬১৭টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০২৪ অর্থ বছরে ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস প্রজেক্টের অধীনে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে ৩০৫ জনকে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ স্ট্যাটিসটিক্স এন্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন এন্ড পিরিয়ডিক লেবার সার্ভে অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে আমাদের রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ১৮-১৯ এ জাতীয় গড় যেখানে ৫.৮% ছিল, সেখানে রাজ্যের গড় ছিল ১০%। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্যের গড় ১.৭% এবং জাতীয় গড় ৩.২%। যদিও বিরোধীরা রাজ্যে বেকারত্ব নিয়ে কোন তথ্য না জেনে নানা কথা বলেন ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ল্যাম্পস, প্যাক্স ইত্যাদি সমবায়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়েছেন ও সুফল পাচ্ছেন। টিআরএলএম এর মাধ্যমে ৫৩,৬২৩টি স্ব সহায়ক দল আছে। যেখানে মোট সদস্য সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার। ত্রিপুরা আরবান লাইভলিহুড মিশন এ ৫,৯৪১টি স্ব সহায়ক দলে ৬৩,৭৪৩ জন মহিলা যুক্ত রয়েছেন। রাজ্যে বর্তমানে লাখপতি দিদির সংখ্যা ৯১,৮৭১ জন। স্ব সহায়ক দলের মহিলাদের সরকারের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭৪৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা রিভলভিং ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে ২০১৭-১৮ সালে মাত্র ৩২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এই সরকারের সময়ে ৭১৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও টেকনিক্যালি অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। সরকারের নীতি, নির্দেশিকা ও জনকল্যাণে থাকা স্কিমগুলি বাস্তবায়নে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে সরকারি কর্মচারীদের। সরকারের লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করা।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধায়ক কিশোর বর্মন, মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায় সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।