আগরতলা।।গণবন্টন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও গতিশীল রাখতে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন শূন্যপদ পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খাদ্য দপ্তরে আরো ১২ জন সাব ইন্সপেক্টর, ৩ জন ফিউমিগেশন এসিস্ট্যান্ট, ৬ জন স্টোর কিপার ও ৩৫ জন স্টোর গার্ড নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা ও যথাযথ পদ্ধতি মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি প্রদান করছে সরকার। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে টিপিএসসি’র মাধ্যমে নির্বাচিত ফুড ইন্সপেক্টরদের অফার বিতরণ ও মেগা রক্তদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর উপস্থিতিতে চাকরি প্রাপকদের হাতে এদিন অফার বন্টন করা হয়। খাদ্য দপ্তর, পর্যটন দপ্তর ও পরিবহণ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, টিপিএসসি’র মাধ্যমে নির্বাচিত ১৫ জন ফুড ইন্সপেক্টরকে অফার দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার আসার পর থেকে স্বচ্ছতার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে নিয়োগ পত্র দেওয়া হচ্ছে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই অফার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। কিন্তু এই অফার দিতে গিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অনেক সময় অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩৫ বছরের জমানায় আমরা দেখেছি পার্টি অফিস থেকে অফার দেওয়া হতো। এমনকি অনেকের বাড়িতেও অফার পৌঁছে দেওয়া হতো। আর আমাদের সৎ সাহস আছে বলেই আমরা এভাবে অফার বন্টন করছি।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১৯ এপ্রিল টিপিএসসি’র মাধ্যমে নির্বাচিত ১১ জন স্মল সেভিংস ইন্সপেক্টরকে অফার দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তর, পূর্ত দপ্তর এবং ত্রিপুরা সমবায় ব্যাংকে ৪৭৯ জনকে অফার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩০ এপ্রিল ২২৮ জন শিক্ষক, ১৩ মে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে ৯৭৫ জন এবং আজ খাদ্য দপ্তরে ১৫ জনের হাতে অফার বন্টন করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক অফার দিয়ে যাচ্ছি। এরমধ্যে কেউ বলতে পারবেন না যে কাউকে ধরে, কোন নেতাকে ধরে কিংবা কোন প্রভাবশালীকে ধরে চাকরি পেয়েছেন। নিজেদের পরিশ্রম ও মেধার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাইছি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উপযুক্ত পদ্ধতি মেনে ছেলেমেয়েদের মেধা ও দক্ষতার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারি চাকরি হোক। এতে কাজের ক্ষেত্রেও গুণগতমান বজায় থাকবে এবং মানুষের কল্যাণে কাজে আসবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজকের দিন পর্যন্ত ডাই ইন হারনেস সহ মোট ১৯,২৬২ জনকে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি প্রদান করা হয়েছে। অন্যান্য দপ্তরগুলিতেও যতগুলি শূন্যপদ আছে সেগুলি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি চাকরি ছাড়াও স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। কন্ট্রাক্টচুয়াল ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। সরকারি নীতি নির্দেশিকা মেনে ডাই ইন হারনেসেও বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। ডাঃ সাহা বলেন, খাদ্য দপ্তর সরকারের অন্যতম প্রধান দপ্তর। গণবন্টন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে দপ্তরের সমস্ত কর্মী ও অফিসারগণ মিলে নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। রাজ্যের মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ৬.০৬ লক্ষ প্রায়োরিটি হাউজহোল্ড, অন্তোদয় অন্ন যোজনা পরিবারের জন্য বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে। ৩.৮৩ লক্ষ এপিএল ভুক্ত পরিবারকে ভর্তুকিতে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৯.৮১ লক্ষ রেশন কার্ড ধারীদের বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে খাদ্য দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে খাদ্য দপ্তরে ৩৬ জন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক ও ১৯ জন মাল্টি টাস্কিং স্টাফ নিয়োগ করা হয়েছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২.২৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা। এই টাকা সরাসরি বেনিফিশিয়ারি কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮০০ জনকে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এদিন অনুষ্ঠানে রক্তদানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রক্তের জন্য কারোর যাতে প্রাণ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, খাদ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন, পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা, পরিবহণ দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, অতিরিক্ত সচিব সুমিত লোধ, অতিরিক্ত সচিব সুব্রত চৌধুরী, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগি সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে নতুন ১৫ জন ফুড ইন্সপেক্টরের হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।