আগরতলা, ৩০ এপ্রিল: চাকরির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। স্বচ্ছ নিয়োগ নীতির মাধ্যমে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৭,৫৫৪ জনকে চাকরি প্রদান করেছে সরকার। আর শুধু ২০২৫ সালে আজকের দিন পর্যন্ত ৩,৫৫৪ জনকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।

                           আজ আগরতলার নজরুল কলাক্ষেত্র প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ২২৮টি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট টিচার (ইউজিটি) ও গ্র্যাজুয়েট টিচার (জিটি) পদে নিয়োগ পত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                                 অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে একটার পর একটা অফার বিতরণ প্রক্রিয়া চলছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেও অফার প্রদানের ব্যবস্থা হবে। সরকার পদ্ধতি মেনেই সবকিছু করছে। কাউকে বঞ্চিত করা এই সরকারের লক্ষ্য নয়। স্বচ্ছতার মাধ্যমে আজ শিক্ষা দপ্তরে ২২৮ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এরমধ্যে ৬৬ জন ইউজিটি এবং ১৬২ জন জিটি রয়েছেন। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের স্পস্ট নির্দেশিকা রয়েছে যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আজ যারা নিয়োগপত্র গ্রহণ করছেন তাদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে তাদের কর্মজীবন সুন্দর ও উজ্জ্বল হোক - এই প্রত্যাশা রাখছি। 
                            আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, গত ২৭ এপ্রিল টেট টু এর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমার কাছে খবর রয়েছে যে আগামী ৪ মে টেট ওয়ান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্বচ্ছতার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনে আরো গতি বৃদ্ধি করা। এই দিশায় কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন দপ্তরে নতুন নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি শূন্য পদগুলি পূরণ করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার আসার পর স্বচ্ছ নিয়োগ নীতির মাধ্যমে ২০২৫ এর মার্চ পর্যন্ত ডাই ইন হারনেস সহ মোট ১৭,৫৫৪ জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। সরকারি বা প্রশাসনিক কাজে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল টিপিএসসির মাধ্যমে স্মল সেভিংস ইন্সপেক্টর পদে অফার দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রাজ্য সরকারের ৩টি দপ্তরে ৪৭৯ জনকে অফার দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে ১২৬ জন, পূর্ত দপ্তরে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে ১৯৭ জন এবং ত্রিপুরা সমবায় ব্যাংকে ১৫৬ জন চাকরি পেয়েছেন। আর আজ ৩০ এপ্রিল ২২৮ জনের হাতে অফার তুলে দেওয়া হচ্ছে। 
                             মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি চাকরি প্রদান করায় এখন পর্যন্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় নি। আমাদের প্রতিশ্রুতি চাকরি প্রদান ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বারবার বলছেন স্বচ্ছতা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকারও। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, এগ্রি এসিস্ট্যান্ট সহ ইত্যাদি পদে রাজ্য সরকারের ৩৫টি দপ্তরে ১,৯৮০ জনকে নির্বাচিত করে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করতে পিআরটিসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আউটসোর্সিং ও চুক্তিভিত্তিক এর মাধ্যমে প্রায় ৫,৭০০ এর অধিক নিয়োগ করা হয়েছে। এখন রাজ্যে কর্মসংস্থানের পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ২,৯০০ এর অধিক ব্যক্তিকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত করা হয়েছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের মাধ্যমে গত তিন বছরে রাজ্যের শিল্প এলাকাগুলিতে ১,৬০০ এর অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। 
                                মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস প্রজেক্টের অধীনে আগরতলা, ধর্মনগর ও কৈলাশহরে তিনটি মডেল কেরিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ১০টি ভোকেশনাল গাইডেন্স প্রোগ্রামে অনেক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২৪ অর্থবর্ষে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে আয়োজিত ৮২টি কেরিয়ার কাউন্সিলিং প্রোগ্রামে প্রায় ১২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের অগ্নিবীর প্রকল্পে আয়োজিত ২৮টি কেরিয়ার এওয়ার্নেস প্রোগ্রামে ৩ হাজারের অধিক প্রত্যাশী অংশ নেন। রাজ্যে বর্তমানে বেকারত্বের হার অনেকটা কম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতার উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। 

                              এদিন অফার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী সাহা রায়, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, অধিকর্তা এন সি শর্মা সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *