আগরতলা: ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সামগ্রিক অপরাধের হার ১৯.৪% হ্রাস পেয়েছে। খুব সহসাই ত্রিপুরা পুলিশে ৯১৬ কনস্টেবল ও ২১৮ জন সাব ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার।আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক পোস্ট বা বাড়বাড়ন্ত কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে গারদে পুরে দেওয়া হবে।

                             আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা পুলিশের ৯৭৫ কনস্টেবল (পুরুষ ও মহিলা) পদে অফার লেটার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩৩২ জন মহিলা এবং ৬৪৩ জন পুরুষ সহ মোট ৯৭৫টি অফার বন্টন করা হয়েছে।
                              অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং অনেকেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এই সরকার সবকিছু সময়মতো কাজ করে। সেজন্য যারা এখানে অফার নিতে এসেছেন তাদের জন্য আজ একটি স্মরণীয় দিন। যারা এই অফারের জন্য এখানে এসেছেন তারা সকলেই প্রতিভাবান। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির জন্য আপনারা এই চাকরি পেয়েছেন। এই সরকার যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি প্রদান করছে। 
                         অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান,  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরগুলিতে পরিকাঠামো এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত ৩৬৮.২১ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডাই-ইন-হারনেস সহ ১৭,৫৫৪ জন চাকরি পেয়েছেন এবং কর্মসংস্থানও তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ২.১ লক্ষ উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। আমরা আরও যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গুণমানসম্পন্ন শিক্ষক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছি। শুধু ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৪,৪৯৯ জন সরকারি চাকরির অফার পেয়েছেন। আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ চালু করেছি। 

                          মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ত্রিপুরা পুলিশের জন্য আরও ৯১৬ জন কনস্টেবল এবং আরও ২১৮ জন সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। খুব সহসাই এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
                             মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণকে নিরাপত্তা প্রদান আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এজন্য ধীরে ধীরে পুলিশ কর্মীদের ঘাটতি নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। খুব শীঘ্রই স্পেশাল একজিকিউটিভ এর ফল ঘোষণা করা হবে। আমাদের অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ক্ষমতা ও ফ্রি হ্যান্ড দিতে হবে। যাতে তারা আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারে। অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার জন্য দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ফ্রি হ্যান্ড দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই প্রতিফলন হিসেবে আমরা দেখেছি যে তারা কীভাবে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান সংঘটিত করেছে।

                          বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার কখনই তথ্য ছাড়া কথা বলে না। রাজ্যে ২০২৩ সালের তুলনায় সামগ্রিক অপরাধের হার ২০২৪ সালে ১৯.৪% হ্রাস পেয়েছে। শুধু গত চার মাসে সামগ্রিক অপরাধের হার ১০% হ্রাস পেয়েছে। আমরা মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ রুখতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি এবং এজন্য রাজ্যের প্রতিটি থানায় ওমেন হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১৩% হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২৫ সালে এখনও অবধি ৪০% হ্রাস পেয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় ১০৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মাদকদ্রব্য ধ্বংসের পরিমাণ ১৩২% বৃদ্ধি পেয়েছে। 
                                  এদিন বক্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়া অপব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যেও হুশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে অপপ্রচার বা নেতিবাচক পোস্ট কিংবা কারোর বাড়বাড়ন্ত কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে গারদে পুরে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মানুষের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করতে ত্রিপুরা পুলিশকে পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। 
                                   অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, তপশিলি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, ডিজি (গোয়েন্দা) অনুরাগ সহ আরক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই চাকরি প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *