আগরতলা: ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের অকাল প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আজ বিধানসভার অধ্যক্ষ স্বর্গীয় বিশ্ববন্ধু সেনের মরদেহ বিধানসভা প্রাঙ্গণে পৌঁছালে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা এক মহান ব্যক্তিত্ব ও ব্যতিক্রমী নেতা হিসেবে তিনি সর্বদা মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত ৮ আগস্ট সকালে আগরতলায় আমার সরকারি বাংলোতে দেখা করতে আসেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। যখনই আগরতলায় আসেন আমার সঙ্গে দেখা করে যান এবং এককাপ চায়ের আবদার করেন। আমি তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিই। পরবর্তী সময়ে কয়েকটা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু পরে হঠাৎ করে খবর এলো যে ট্রেনে যাওয়ার সময় ট্রেনের বাথরুমের ভেতর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে গেছেন। সেখান থেকে দ্রুত তাঁকে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এই খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করি এবং নিজেও হাসপাতালে যাই। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং দ্রুত অপারেশন করতে হবে। অন্যথায় সমস্যা হবে। এরপর গ্রিন করিডোর করে আমার এসকর্ট দিয়ে তাঁকে আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে অপারেশন করা হয়। জমাট রক্ত বের করে নেওয়া হয়।
ডাঃ সাহা জানান, এখানে তাঁকে দুদিন রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের কথামতো উন্নত চিকিৎসার জন্য দুদিন বাদে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যে ডাক্তার বাবু অপারেশন করেছিলেন তাঁর সঙ্গে আমি নিজেও কয়েকবার কথা বলেছি। ওই ডাক্তার বাবু এখানে সেমিনারে এসে আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। জীবন যুদ্ধের সঙ্গে তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উনার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি প্রায় কথা বলতাম। কিন্তু গতকালই সেই বেদনাদায়ক খবর আসে যে বিশ্ববন্ধু সেন আর নেই। যা আমাদের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত বিশ্ববন্ধু সেন আমাদের ভারতীয় জনতা পার্টির একজন বরিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ। বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নাটকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। যাত্রাপালার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ছিলেন কবি মানুষও। ১৯৭১ সালে এমবিবি কলেজে পড়ার সময় আমি সায়েন্স ও তিনি আর্টস বিভাগে পড়াশুনা করেছি। এরও আগে থেকে উনার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। আমি একজন প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। আর ত্রিপুরাবাসীর জন্য একটা বিরাট ক্ষতি হলো।
আমাদের বিধানসভা তিনি যেভাবে পরিচালনা করতেন সেটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। ত্রিপুরাবাসীর জন্য তো ক্ষতি হলো। আর আমারও ব্যক্তিগতভাবে বিরাট ক্ষতি হলো।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি যেখানে গেছেন আমি ভগবানের কাছে তাঁর আত্মার সদগতি কামনা করি। সেই সঙ্গে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। এই অপূরণীয় ক্ষতি উনারা যেন সহ্য করতে পারেন।
