আগরতলা: সুদীর্ঘ শাসনে জনজাতিদের ভোটের বাক্স বানিয়ে রেখেছিল কমিউনিস্টরা। আর এখন কমিউনিস্টদের ব্যান্ড বেজে গেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের জন্য কাজ করার একটা পার্টি।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন চত্বরে ভারতীয় জনতা পার্টি আয়োজিত এক যোগদান সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এতদিন ধরে বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্টরা ২০ থেকে গণনা করতো। ওরা জানতো যে ২০টি আসন তাদের নিশ্চিত। কারণ জনজাতিদের তারা ভোটের বাক্স বানিয়ে রেখেছিল তারা। তাই ২০ থেকে গণনা শুরু করতো ওরা। কিন্তু এখন কমিউনিস্টদের ব্যান্ড বেজে গেছে। আমরা ওদের থেকে শিখেছি। এখন থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার যখনই হবে আমরাও ২০ থেকে গণনা শুরু করবো।
আগামী বিধানসভা থেকেই সেটা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার আশীর্বাদ রয়েছে আমাদের উপর। আমরা সবাই শান্তি চাই। বন্দুকের নল থেকে শক্তি বের হয় ওদের। এই রাজনীতি আমরা দেখেছি। এতদিন ধরে জনজাতি ভাই বোনেরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন।
বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক দল (ছোট ছোট) দেখেছি। মুখ্যমন্ত্রী যখন কোন জায়গায় সভা করতে যান তখন তাকে আটকাতে বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়, দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, হুমকি দেওয়া হয়, গালিগালাজ করা হয়। একই অবস্থা প্রদেশ সভাপতির ক্ষেত্রেও। কিন্তু এভাবে চলবে না। আমি বারবার বলছি যেখানে আক্রমণ বা যত বেশি আক্রমণ করা হবে তত বেশি শক্তিশালী হবে ভারতীয় জনতা পার্টি। কেউ রুখতে পারবে না।
আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সবসময় স্মরণ করি। তিনি যেভাবে বলেন, যেভাবে মার্গ দর্শন করান সেভাবেই আমরা কাজ করি। অপারেশন সিঁদুরের সময়ে নিউ ইন্ডিয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। সেভাবে আমরাও আগামীদিনে নিউ ত্রিপুরা গড়ে তুলবো। থানসা, থানসা, থানসা। থানসার অর্থ হচ্ছে জাতি, জনজাতি, মণিপুরী, সংখ্যালঘু। আর এই থানসার মাধ্যমে আমরা একটা নতুন ত্রিপুরা গড়ে তুলতে চাই।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা সম্মান দিতে জানি। এই ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য রাজন্য পরিবার থেকে যারা কাজ করে গেছেন তাদের সম্মান দিয়েছি আমরা। ভারতীয় জনতা পার্টি গুন্ডার পার্টি নয়। ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের জন্য কাজ করার একটা পার্টি। আমরা দেখেছি এরআগে সিপিএম যে কায়দায় গায়ের জোরে কাজ করেছে এখন অনেক পার্টি সেটা অনুকরণ করছে। তারআগেও অনেক পার্টি ছিল। এভাবে ৫ বছর অন্তর অন্তর নতুন নতুন পার্টি হয়। কিন্তু আসলে কেউ জনজাতিদের কথা চিন্তা করে না। জনজাতিদের উন্নয়নে যা যা করার সেটা করবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ডাবল ইঞ্জিন সরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনজাতিদের জন্য একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন। এসব বুঝতে হবে আমাদের।
সভায় তাঁর বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এখনো অনেকে ভুলপথে পরিচালিত হচ্ছে। তাই আমি এখনো বলবো যারা এখনো বিভিন্ন চিন্তাধারায় বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে ভুল বার্তা শুনছে তারা যেন সেই পথে না চলে। এখনো সময় আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আজ এখানে যারা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করতে এসেছেন তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যকে শক্তিশালী করতে হলে, দেশকে শক্তিশালী করতে হলে ভারতীয় জনতা পার্টির উপর ভরসা করতে হবে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর মানুষ বুঝতে পেরেছে যে এখন দেশ একজন নির্ভরযোগ্য মানুষের হাতে গেছে। এই ভারত আবারো জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে। আর ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন হয়েছে। কিন্তু অনেকে বলেন যে ২০২৩ এ আমরা যদি বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী না দিতাম তবে বর্তমান সরকার গঠন হতো না। তাই আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে ২০১৮তে আপনারা কোথায় ছিলেন? তখন তো আপনাদের দেখা যায় নি।
যখন এডিসি নির্বাচনের ঘণ্টা বাজবে তখন আজকের চাইতেও বড় ব্যান্ড, বড় সভা এডিসি নির্বাচনের পরে খুমুলুঙ এ করা হবে। আর আমরা দেখিয়ে দেবো জনজাতিদের জন্য কি করতে পারি। ডাঃ সাহা বলেন যে কিসব কথা বলছেন? যখন তখন আবোল তাবোল যা খুশি বলছেন। এসব কিছু মানুষ বুঝতে পারছে এখন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, তপশিলি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, ভারতীয় জনতা পার্টির সহ সভাপতি তথা এডিসি সদস্য বিমল চাকমা, সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক, বিধায়ক শম্ভু লাল চাকমা সহ দলের অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিন এই সভায় ১,৭০৬ পরিবারের মোট ৫,০৫০ জন ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। তাদের দলে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।
