আগরতলা।। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের নতুন পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে রাজ্যে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ মেলাঘরের রাজঘাটে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী নীরমহল জল উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলির বিকাশের জন্য কাজ করছে। গোমতী জেলার বনদুয়ারে ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫১ শক্তি পীঠের প্রতিলিপি তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের নবনির্মিত রূপের পুনর্নির্মাণ ও সৌন্দর্যকরণের উদ্বোধন করার জন্য রাজ্যে আসছেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত তিনদিন ধরে এখানে উৎসব হচ্ছে। নীরমহল ও রুদ্রসাগরের সঙ্গে এখানকার মানুষের নাড়ির সম্পর্ক, জীবন জীবিকা, আত্মিক সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের দেশে যেসব জল মহল রয়েছে তার মধ্যে নীরমহল অন্যতম একটি। প্রাসাদের সৌন্দর্য এবং এর প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।
এই নীরমহলকে নিয়ে ত্রিপুরা সরকার অনেক চিন্তাভাবনা করছে, কিভাবে একে আরো প্রচার প্রসার করা যায়। যদিও এই নীরমহল সম্পর্কে এখনো অনেক মানুষ তেমনভাবে অবগত নন। ইন্টারনেটকে মাধ্যম করে সকলকে নীরমহলের ঐতিহ্য ও পরম্পরা সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। তবেই মানুষ জানবে এবং বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এখানে আসবেন। এতে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। আমরা সবাই জানি মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের হাত ধরে এই নীরমহল গড়ে উঠেছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বদেশ দর্শন কর্মসূচিতে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিতে রাজঘাটের সৌন্দর্যায়ান ও নীরমহলও রয়েছে। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্যও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যা যা দরকার, সেভাবে সাহায্য করছেন তিনি। মাথাপিছু আয় ও জিএসডিপি এর ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে আমরা চাইছি সমস্ত গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন। ২০১৮ সালে আমাদের সরকার আসার আগে মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার স্বসহায়ক দল ছিল রাজ্যে। সেই জায়গায় বর্তমানে সারা রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার স্বসহায়ক দল গঠন করার মধ্য দিয়ে রাজ্যের নারীদের স্বনির্ভর করে তোলা হচ্ছে। চাকরি ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক দিয়ে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। তাই রাজ্যে শান্তির পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে এবং এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ এখন ত্রিপুরায় আসতে চাইছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে কি অবস্থা ছিল রাজ্যে? আগে মেলা ও উৎসবকেও রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা চাই সবাইকে নিয়ে মেলা ও উৎসবে সামিল হতে। আমরা চাই মানুষের উপর বোঝা না হতে। আগে দেখতাম সংস্কৃতির নামে কি হতো। একটা সুষ্ঠু সংস্কৃতি মনোভাব সম্পন্ন পরিবেশ এখন আমরা তৈরি করতে পেরেছি। এতদিন ত্রিপুরায় আমরা যে অপসংস্কৃতি দেখে এসেছি তার থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে একটা গণ আন্দোলন প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মন, সিপাহীজলা জেলার সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়ক তফাজ্জল হোসেন, নলছড় পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান স্বপন দাস, মেলাঘর পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন অনামিকা ঘোষ পাল রায়, সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা সহ অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকগণ।