আগরতলা: বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ এর লক্ষ্য সাধারণ মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সুস্বাস্থ্য সম্মত ভবিষ্যত নিশ্চিতকরণ। আর এই সময়ের মধ্যে বিকশিত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে রাজ্যকে শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত করতে হবে। নীতি আয়োগের প্রকাশিত সূচকে টপ পারফর্মিং স্টেট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ত্রিপুরা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ ভিশন ডকুমেন্ট নিয়ে আমরা সচিবালয়ে আলোচনায় বসেছি। সেখানে মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে করে সমস্ত আধিকারিকগণ ছিলেন। সেই বৈঠকে একটা প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল। এরপর যাবতীয় পর্যালোচনার পর বিকশিত ত্রিপুরা ডকুমেন্ট তৈরি হয়েছে। বিকশিত ত্রিপুরা গঠনের খসড়া তৈরিতেও সামনের সারিতে এগিয়ে রয়েছে আমাদের রাজ্য।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দৃঢ়তার সঙ্গে ২০৪৭ এর মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার কথা বলেছেন। বিভিন্ন প্যারামিটারের উপর ভিত্তি করে সবদিক দিয়ে উন্নত ও বিকশিত হওয়ার জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। কারণ সবগুলি রাজ্য বিকশিত না হলে বিকশিত ভারত গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর একটা নির্দিষ্ট নির্দেশিকা, রোডম্যাপ, টাইমলাইন ইত্যাদি মাথায় রেখে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেই দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকারও।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আত্মনির্ভরতা ও উদ্ভাবনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ভোক্যাল ফর লোক্যাল এ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে নাগরিক ক্ষমতায়নে বিশেষ জোর দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে সমস্ত মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ে আমাদের রাজ্যকে স্বশক্তকরণ করতে হবে। এতে রাজ্য মজবুত ও শক্তিশালী হবে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পরিবর্তন হয়েছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি গ্রহণ করেছেন তিনি।

আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় সবদিকে এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করছে রাজ্য সরকার। আগের তুলনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে রাজ্যে। ডিজিটাল ত্রিপুরার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বাইরে থেকেও এখন বিনিয়োগকারীরা ত্রিপুরায় আসছেন। ত্রিপুরায় বাঁশ, রাবার, বনজ সম্পদের উপর ভিত্তি করে এমএসএমই’র মাধ্যমে বহু শিল্পের কাজ হচ্ছে। এতে রাজ্যের অনেক ছেলেমেয়ে জীবন জীবিকার সুযোগ পাচ্ছে। রাজ্যে গুড গভর্নেন্স (সুশাসন) এর অফিস খোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরগুলির কাজকর্মে নজর রাখা হয়। ২০২৩ – ২৪ এ রাজ্যে জিএসডিপি ১৪.২১% বৃদ্ধি হয়েছে। জিএসডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত এডভান্সমেন্ট ইনডেক্স (পিএআই ২.০) এ ত্রিপুরা ১০০% পঞ্চায়েত সফলভাবে গ্রামসভা সম্পন্ন করেছে। বিভিন্ন প্যারামিটারে প্রশংসিত ও সম্মান অর্জন করছে ত্রিপুরা। কিছুদিন আগে দেশের পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ত্রিপুরা। প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দিশায় ত্রিপুরায় ১,০৮,২৮১ জন মহিলা লাখপতি দিদি হয়েছেন। জুলাই মাস পর্যন্ত স্বচ্ছতার মাধ্যমে ডাই ইন হারনেস সহ ১৯,৭৪২ জনকে সরকারি চাকরি দিয়েছে বর্তমান সরকার। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সৌরশক্তির ব্যবহারও বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা ৩ শতাংশ থেকে ৮৬ শতাংশের অধিক পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

আগামী বছরের মধ্যে ১০০ শতাংশ বাড়িঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত ই অফিস প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এতে রাজ্যের ১,২৭১টি পঞ্চায়েত, ৫৮টি ব্লক, ২৩টি মহকুমা, ৮টি জেলা ও সমস্ত দপ্তরে ই অফিস চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকার বেশকিছু স্কিম ও পলিসি করেছে। উন্নত ত্রিপুরা ও শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রী রতন লাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মন, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, নীতি আয়োগের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর রাজীব সেন, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব এল টি ডার্লং সহ অন্যান্য দপ্তরের সচিব ও পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *