আগরতলা।।বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যপদগুলি পূরণ করার জন্য পুরোদমে চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা করার সুবিধার্থে তাদের জন্য সব জায়গায় স্পেশাল কোচিং সেন্টারের বন্দোবস্ত করছে সরকার। এর পাশাপাশি নিজেদের দায়িত্ব পালনে আরো সচেতন হতে হবে সরকারি কর্মচারীদের।

আজ আগরতলার মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষা (বিদ্যালয়) দপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন পদে অফার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে কিভাবে চাকরি দেওয়া যায় সেটা বিগত কয়েক বছরে দৃষ্টান্ত রেখেছে ত্রিপুরা সরকার। আজ মোট ২২২ জন নির্বাচিত প্রার্থীর হাতে অফার বন্টন করা হচ্ছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এই নিয়োগের ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে। আজ অফার নিতে আসা সমস্ত চাকরি প্রাপক ও তাদের পরিবারকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এর পাশাপাশি কাজে যোগদানের পর অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে তাদের। যাতে সাধারণ মানুষ আরো উপকৃত হয়। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরেরও মন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

বক্তব্যে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ডাই ইন হারনেস সহ ১৯,৪৮৪ জনকে চাকরি প্রদান করেছে বর্তমান সরকার। সাধারণত কারোর বাড়িতে চাকরি হলে পুরো পরিবারে আনন্দ বয়ে যায়। চাকরি বা কর্মসংস্থান একটা পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্রিপুরা সরকার সেই দিশায় কাজ করছে। আর বিভিন্ন দপ্তরে থাকা শূন্যপদ পূরণ করার চেষ্টা করছে সরকার। আজ অফার প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন – লাইব্রেরিয়ান পদে ১০৭ জন, এলডিসি ১৫ জন, গ্রুপ ডি ২ জন এবং মাল্টি টাস্কিং স্টাফ ৯৮ জন। সরকারি চাকরি ছাড়াও বিভিন্নভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্রে চাকরি প্রদানের চেষ্টা করছে সরকার। আউটসোর্সিংয়ে প্রায় ৫,৭০০ জনের অধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থবর্ষে ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিসের অধীনে ৩০৫ জনকে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের অবশ্যই জনসাধারণের সমস্যা বা অভিযোগগুলি শুনতে হবে এবং সেগুলি সমাধান করতে হবে। এই সরকার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে। রাজ্যে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, ২০১৮- ১৯ সালে রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সেসময় রাজ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১০%। যেখানে জাতীয় গড় ছিল ৫.৮%। কিন্তু ২০২৩- ২৪ সালে রাজ্যে ১.৭% এবং জাতীয় ক্ষেত্রে ৩.২% হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে ত্রিপুরা রাজ্য সঠিক দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় বলছেন যেকোন স্তরের সরকারি কর্মীদের অবশ্যই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এটা নতুন চাকরি প্রাপকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে ২০৪৭ এর মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে খুব কম সময়ের মধ্যে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত ই অফিস চালু হয়েছে। এখন সমস্ত ফাইল ডিজিটাইজড হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে শিক্ষার উন্নয়নে আরও অনেক কাজকর্ম করা হচ্ছে। রাজ্যে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম শুরু হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুপার ৩০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা বিজ্ঞান এবং ইংরেজী বিষয়ে পড়াশুনার জন্য প্রত্যেকটি মহকুমায় কোচিং সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও নতুন সাধারণ ডিগ্রি কলেজ সহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *