আগরতলা।।১৯৭৫ থেকে ৭৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ইমার্জেন্সি ঘোষণার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকা। মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছিল তখন। আর এখন গনতন্ত্রকে রক্ষা করা ও দেশের অখন্ডতাকে রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সংবিধান হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কার্যক্রমে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রেক্ষাপট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ মে দেশে জরুরি (ইমার্জেন্সি) অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। যা বলবৎ ছিল ১৯৭৭ এর ২১ মার্চ পর্যন্ত। সেই সময়ে কি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল, মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল।
দেশজুড়ে রেল ধর্মঘট করা হয়েছিল। ত্রিপুরায় তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুখময় সেনগুপ্ত। একটা বিভীষিকাময় অবস্থা ছিল। আতঙ্কের পরিবেশ ছিল গোটা রাজ্যে। মিশা আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিনা বিচারে মানুষকে জেলে পোরা হয়েছিল। সে এক অবর্ণনীয় কাহিনী। কাকে কোন সময় আটক করা হবে কেউ জানতো না। মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কমিউনিস্টদের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সিপিএম মানে ইমার্জেন্সি। দীর্ঘ বছর তারা এই রাজ্যে শাসন করেছিল। তাদের কাছে কেউ ভালো না।
শুধু তাদের দলে নাম লেখালেই ভালো হওয়া যায়। আমরা জোট আমলের ৫ বছরও দেখেছি। কে কত সন্ত্রাস করতে পারবে তারই প্রতিযোগিতা যেন চলতো তাদের। দীর্ঘ ৩৫ বছরের কমিউনিস্ট জমানায় খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ প্রত্যক্ষ করেছে এই রাজ্যের মানুষ। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সেটা আমাদের সরকার করে দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের অভিভাবক। আর গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ আমাদের সংবিধান।
ড. বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে এই সংবিধান রচিত হয়েছিল।মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সংবিধান হত্যা দিবস কার্যক্রম করার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যারা নিবেদিত ও সমর্পিত হয়েছিলেন তাদেরকে সম্মান জ্ঞাপন করা। আর বিরোধীরা বলে এখানে আইন শৃঙ্খলা নেই, গণতন্ত্র নেই। ওরা আবার বিজেপির বিদায়ের স্বপ্নও দেখে। মানুষের আকর্ষণ পেতে উল্টোপাল্টা বলাই তাদের রাজনীতি। অথচ ইমার্জেন্সির সময়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, প্রতিবাদী সহ বহু মানুষকে বিনা বিচারে জেলে পোরা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত গণতন্ত্রেরই জয় হয়। জনতার সম্মিলিত চাপে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কাজ করছেন। মুসলিম মা বোনেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিন তালাক প্রথা বাতিল করেছেন।
জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫ এ ধারা বিলোপ করেছেন। ডাঃ সাহা বলেন, ইমার্জেন্সি সময়ের অন্ধকার দিনগুলি সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা উচিত।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ কৃতি দেববর্মা, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, বিশিষ্ট সাংবাদিক স্রোত রঞ্জন খীসা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য সহ বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ।