দিল্লি : জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বড় পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত – সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত ।এছাড়া পাকিস্তানিদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে সমস্ত ‘সার্ক’ ভিসা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আটারি সীমান্তও। ‘সার্ক’ ভিসার মাধ্যমে যে পাকিস্তানিরা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন, তাঁদের দেশ ছাড়তে ২ দিন সময় দেওয়া হলেও যারা সম্প্রতি ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ফেরার জন্য ১ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকার। বুধবার ভোরেই সৌদি আরব সফর থেকে ফিরে দু’দফা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রথম দিল্লি বিমানবন্দরে একপ্রস্থ বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মোদী। ওই বৈঠকে ছিলেন বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এবং অন্য আধিকারিকরাও। পরে সন্ধেয় তাঁর বাসভবনে বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সহ আরও অনেকের সঙ্গে। এরপরই এই খবর সামনে এসেছে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হল।
শুধু তাই নয়, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের আধিকারিকদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। ইসলামবাদের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আধিকারিকদের দেশে ফেরার নির্দেশও দিয়েছে নয়াদিল্লি। এও স্পষ্ট করা হয়েছে, পাক নাগরিকদের আপাতত আর ভিসা দেওয়া হবে না।পাকিস্তানের ঝিলম, চেনাব, রবি, বিয়াস এবং সাতলুজ নদীগুলি সিন্ধু নদের জলের ওপর নির্ভর করে। এই নদীগুলি থেকেই পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল পৌঁছয়। তাই সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে দেওয়ার মানে আদতে পড়শি দেশকে ‘ভাতে মারা’। জল সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে পাকিস্তান। ১৯৬০ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯ সালের যুদ্ধ দেখেছে এই জলচুক্তি। কিন্তু সেই সময়ও তা বাতিল বা স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার সন্ধেয় প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। সূত্রের খবর, পহেলগামের ঘটনার দ্রুত জবাব দেওয়ার বার্তা দেন মোদী। এই বৈঠকের পরই বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কার্যত ‘জবাব’ দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে।
পহেলগামে যে ঘটনা ঘটেছে তার দায় অবশ্য পাকিস্তান স্বীকার করেনি। তবে ইতিমধ্যে জানা গেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন এই হামলার পিছনে রয়েছে।ইতিমধ্যে হামলাকারী চার জঙ্গির ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তারা হল জুনেইদ, সুলেমান শাহ, আবু তালহা ও আসিফ শেখ। জানা গেছে, মঙ্গলবার এমন নারকীয় ঘটনার জন্য আগে থেকেই বৈসরনে এসেছিল জঙ্গিরা। রেইকি চালিয়ে গোটা এলাকা বুঝে নিয়েছিল।
ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে মঙ্গলবার দুপুরে হিন্দু পর্যটকদের বেছে বেছে গুলি করে খুন করা হয়। এই কর্মকাণ্ডের জন্য পাক সেনা ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে দায়ী করা হচ্ছে।